Political crisis in Bangladesh

Wednesday, 12 February 2014

ফিরে এসো আমার কাছে

জাপার মন্ত্রী-সাংসদর প্রতি এরশাদ

ফিরে এসো আমার কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: ০২:৩২, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
নির্দেশ অমান্যকারী দলীয় মন্ত্রী-সাংসদদের ‘আস্তাকুঁড়ে’ নিক্ষিপ্ত হওয়ার ভয় দেখিয়ে আনুগত্যে ‘ফিরে আসার’ আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, ‘যারা বন্ধন ছিন্ন করতে চায়, তাদের বলছি, ফিরে এসো আমার কাছে। তা না হলে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।’
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টির (জাপা) জেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এরশাদ এই আহ্বান জানান।
মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিজ দলের নেতাদের উদ্দেশে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি যেখানে আছি, সেখানে জাতীয় পার্টি থাকবে। আমি না থাকলে পার্টি থাকার কোনো প্রশ্ন নেই। সামান্য মোহ বা পদের কারণে এই বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না।’
জাপার একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, এরশাদের এই ‘অসহায়’ আহ্বানের মধ্য দিয়ে দলের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব হারানোর চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অবশ্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কিছুদিন আগে থেকেই এরশাদ কর্তৃত্ব হারাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে দলের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে যায় তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদের হাতে।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা, এরপর এরশাদের এক মাস সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) থাকা, এরপর ১৪ জানুয়ারি সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়াসহ নানা নাটকীয় ঘটনার পর গতকাল প্রথম দলের নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন এরশাদ।
দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সব সদস্য ও দলের মন্ত্রী-সাংসদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু জাপা থেকে নির্বাচিত ৩৪ জন সাংসদের মধ্যে এরশাদ ও দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম, ইয়াহিয়া, জিয়াউল হক মৃধাসহ মাত্র পাঁচজন উপস্থিত হন। কিন্তু জাপার সংসদীয় দলের প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ দলের ২৯ সাংসদই এরশাদের ডাকে সাড়া দেননি। এঁদের মধ্যে তিনজন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যও রয়েছেন।
অবশ্য বক্তৃতায় এরশাদ বলেন, ‘যে ৩০ জন সাংসদ আজ মতবিনিময় সভায় আসেননি, তাঁঁরা কি জাতীয় পার্টির বাইরে?’ তিনি এসব সাংসদের উদ্দেশে বলেন, ‘লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তোমরা নির্বাচন করেছ। আর এখানে আসবে না? আমি শেষবারের মতো তাদের বলছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমরা ফিরে আসো। নইলে রাজনীতিতে তোমাদের স্থান হবে না।’
এরশাদ তাঁর নির্বাচনে না যাওয়া, তাঁর নির্দেশ উপেক্ষাকারী ও নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারীদের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার নির্দেশে প্রায় ২০০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তাদের দায় তো আমার।’ তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা অমান্য করে যাঁরা সাংসদ হয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা করিনি, তোমাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম নির্বাচন না করার জন্য। কেন করিনি, তা আমি আজ বলব না। তবে চেয়ারম্যান যা বলে তা নির্দেশ বলে মানতে হবে।’
এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ প্রশ্ন করেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে গিয়েছিল, তারা কি আমাদের প্রিয়পাত্র? তারা কি জাতীয় পার্টিতে থাকবে?’ জবাবে নেতা-কর্মীরা ‘দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান’ বলে স্লোগান দেন।
তখন এরশাদ বলেন, ‘এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। নির্দেশ উপেক্ষাকারীরা দেখবে, পার্টি কীভাবে এগিয়ে চলে। জাতীয় পার্টি ৩০ জন সাংসদের দল নয়, লাখো-কোটি মানুষের দল।’

No comments:

Post a Comment